“লেখাপড়া করে যে গাড়িঘোড়া চড়ে সে” – ছোটোবেলায় আমরা আমাদের বাবা মায়ের কাছে হামেশাই শুনে থাকতাম। জানিনা এখনকার বাবা মায়েরা তাদের সন্তানকে এই কথাগুলি বলেন কিনা। কেউ কেউ আবার বলতেন পড়াশুনা করলে দুধেভাতে থাকা যায়। কথাগুলি প্রত্যেকটি যথার্থ। আগেকার দিনে ভাল ভাবে লেখাপড়া করলে সত্যি ভাল চাকরি পাওয়া যেত। তবে এর যে ব্যাতিক্রম হতোনা তা নয়। আমি যেখানে থাকতাম সেখানে আমার দাদা স্থানীয় এক ব্যক্তি অসম্ভব শিক্ষিত হয়েও কিন্তু চাকরি পাননি। আগেকার দিনে লোকে ব্যবসার থেকে চাকরি বিশেষ করে সরকারি চাকরির দিকে বেশি ঝুঁকতো, এখন চাকরি বা ব্যবসা যাই হোকনা কেন বর্তমান প্রজন্ম কোন কিছুতেই পিছপা নয়। এখন পরিস্থিতি পরিবেশ সব কিছুই পালটে গেছে। আমাদের সময় চাকরির বাজার ভালো ছিল এখন চাকরি নেই বলবোনা কিন্তু মনোমত চাকরি নেই। চাকরির বাজারে ভীষন রকম প্রতিযোগীতা, প্রতিদন্দিতা বর্তমান প্রজন্মকে মানসিক ভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে। আগেকার দিনে যেমন সরকারি চাকরি পাওয়া যেত তেমন বেসরকারি চাকরিও পাওয়া যেত। মধ্যমমানের বা নিম্নমানের ছেলেপুলেরাও চাকরি পেত কিন্তু এখনকার দিনে হয় লেখাপড়ায় খুব ভালো হও নয়তো চাকরি নেই। লোক সংখা বেড়ে গেছে, ‘কষ্ট কন্ট্রোল’ এই কথাটা প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে ভীষন রকম চালু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের খরচ কি করে কমানো যায় তার জন্য অল্প সংখক লোকে কাজ করিয়ে নেওয়ার প্রবৃত্তি। প্রতিদিন এই অল্প সংখক লোকের উপর কাজের বোঝা চাপছে, কাজের চাপ বাড়ার জন্য মানুষের মানসিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। আগেকারদিনে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, সরকারি বা বেসরকার, আট ঘণ্টা কাজ হতো। কিন্তু এখন তা বার ঘণ্টা চোদ্দ ঘণ্টা করে কাজ করতে হচ্ছে। কাজের তুলনায় পারিশ্রমিক আগের তুলনায় অনেক কম। তাই মেনে নিয়েই এখনকার প্রজন্ম কাজ করে যাচ্ছে। এখনকার ছেলে মেয়েরা লেখাপড়ায় যথেষ্ট সচেতন, কিন্তু কর্ম ক্ষেত্রে গিয়ে তারা হতাশ হচ্ছে। চাকরি নেই, ব্যবসা নেই। আমি সেই সমস্ত ছেলে মেয়েদের কিছু বলবো যারা হতাশায় ভুগছে এবং তাদের মা বাবাদেরও বলবো ছেলে মেয়েরা যখন সেভেন এইটে পড়ছে তখন থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিন কোন একজন ভালো ও প্রকৃত জ্ঞানী জ্যোতিষীকে সন্তানের জন্ম ছকটি দেখিয়ে নিন। জন্ম থেকেই ভগবান আমাদের কপালে আমাদের ভাগ্য লিখে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা সবাই সেই ভাগ্য পড়তে পারিনা। প্রকৃত জ্ঞানী জ্যতিষীরা সঠিক ভাগ্য গণনা করতে পারেন। তারা বলে দিতে পারেন আপনাদের সন্তান কোন দিকে এগোলে ভালো ফল করবে বা সফল হবে এবং কি ধরনের কর্ম হবে। হ্যাঁ এখানে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন, শুধু জ্যোতিষী বলে দিলেন যে এইটাতে উন্নতি আছে আর তা হয়ে যাবে তা নয়, উন্নতি বা সঠিক দিশায় এগোনোর জন্য নিজেকে পরিশ্রম করতে হবে। অনেক সময় দেখা গেছে যে যে লাইনে পড়াশুনা করলো সেই লাইনে চাকরি পালোনা, সব সময় যে হবে তারও কোন বাধ্যবাধকতা নেই, এখনকার দিনে এটা খুবই হচ্ছে। তাই একবার ভালো জ্যোতিষী দেখিয়ে নেওয়াই ভালো।
এবার আসি শিক্ষা ও কর্ম সংক্রান্ত জ্যোতিষ আলোচনায়। আমার ব্যক্তিগত ধারণা বর্তমানে টিভির দৌলতে সবারই অল্পবিস্তর জ্যোতিষ সম্বন্ধে ধারণা হয়েছে। পড়াশুনার মূল কারক গ্রহ বুধ গ্রহ ও জ্ঞানের কারক গ্রহ বৃহস্পতি গ্রহ। কৃষ্ণমুর্তী পদ্ধতি অনুসারে ৪র্থ ভাব প্রাথমিক শিক্ষা নির্দেশ করে, ৪র্থ ভাব ও ৯ম ভাব উচ্চ শিক্ষা নির্দেশ করে ও ৪র্থ, ৯ম, ১০ম ভাব কারিগরি বিদ্যা বা নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে পড়াশুনা নির্দেশ করে। শুধু এই দুটি গ্রহ নয় আর অন্য যে সকল গ্রহ আছে তাদের ও রাশি ও নক্ষত্রকে সুক্ষভাবে বিচার করা উচিৎ। আমরা অনেক সময় দেখে থাকি বাবা মায়েরা তাদের ইচ্ছে পূরণের জন্য তাদের ইচ্ছাকে জোর করে তাদের সন্তানদের উপর চাপিয়ে দেয়। ফলে সন্তানেরা মা বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে অনেক সময় অসফল হয়। এতে সন্তানের ও মা বাবার মানসিক অশান্তি হয়, সন্তানের বহু মূল্যবান বছর নষ্ট হয়। তাই কোন একজন ভালো ও প্রকৃত জ্ঞানী জ্যোতিষীকে সন্তানের জন্ম ছকটি দেখিয়ে নিন। বার বার একই কথা লিখছি ‘কোন একজন ভালো ও প্রকৃত জ্ঞানী জ্যোতিষীকে সন্তানের জন্ম ছকটি দেখিয়ে নিন’, অস্বস্তি বোধ করছেন নিশ্চয়ই। বলছি কেন তা এবারের আলোচনায় বুঝতে পারবেন। যে কোন জন্মছক দেখতে গেলে যে ভাবটিকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ তা হল লগ্ন ভাব। লগ্নভাব থেকে একটি জাতককে কেমন দেখতে হবে, তার কর্ম কেমন হবে, তার চরিত্র কেমন হবে, জীবনের আদর্শ কেমন হবে, কেমন বুদ্ধিমান হবে, পরিশ্রমী বা কর্মঠ হবে কিনা, মার্জিত হবে না অমার্জিত হবে, নমনীয় না অনমনীয় ভাবের হবে, নিজের চেষ্টায় কিছু করার ক্ষমতা থাকবে কিনা ইত্যাদী জানা যায়। কোন গ্রহ লগ্নভাবে বলবান হয়ে অবস্থান করে তবে ঐ গ্রহের দশাকালে তার জীবনে অবশ্য অবশ্যই ভালো ফল প্রদান করবে। কর্ম ভাব হল দশম ভাব। কর্ম ভাব অর্থাৎ দশম ভাবে যে গ্রহ অবস্থান করবে সেই গ্রহ যে কর্ম নির্দেশ করে জাতক সেই কর্মে লিপ্ত হবে। যদি দুটি গ্রহ অবস্থান করে তবে দুটি গ্রহের মিলিত ফল প্রদান করবে। যেমন ধরা যাক দশম ভাবে বুধ ও মঙ্গল অবস্থান করছে, মঙ্গল ক্ষত্রিয় কারক ও যোদ্ধা শ্রেনীর তাই মঙ্গল এখানে শারীরিক ক্ষমতা নির্দেশ করবে, বুধ খেলাধুলাকে নির্দেশ করবে তাই বলা যেতে পারে জাতক খেলোয়ার হবে, যদি দশম ভাবটি অগ্নি রাশি হয় যা তেজ নির্দেশ করে তবে জাতক মুষ্টিযোদ্ধা হবে। এক কথায় খেলোয়াড় হবে। যদি ১০ম ভাবে কোন গ্রহ না থাকে তবে সেই ভাবের যে অধিপতি সে যা নির্দেশ করবে জাতক সেই ফল পাবে। কোন ছককে এরকম সুক্ষভাবে দেখতে হবে। শুধু দশ্ম ভাবকে দেখলেই হবে না, দ্বিতীয় ও একাদশ ভাবকেও দেখতে হবে। দ্বিতীয় ভাব ধন, সম্পত্তি ভাব ও একাদশ ভাব নির্দেশ করে রোজগারের উৎস। এই ভাব দুটির অধিপতি ও এই ভাব দুটিতে অবস্থিত গ্রহ, দশম ভাব, দশমাংশ, গ্রহের দশাকাল এই সব কিছু দেখে ও তার পুঙ্খানুপুনঙ্খ বিচার করে তবে জানা যায় জাতক কি কর্ম করবে। লেখাপড়ার যেমন বিভিন্ন দিক তৈরী হচ্ছে তেমন চাকরিরও বিভিন্ন দিক তৈরী হচ্ছে, কে কিসে যাবে কি নিয়ে পড়বে কি চাকরি করবে না ব্যবসা করবে তা জন্ম ছক বিচার করে জেনে নিন। হতাশায় ভুগবান না, হতাশ হবেন না, আমরা জ্যোতিষেরা আপনাদের সেবায় সব সময় আছি।